মানুষের সহিত মানুষের অবাধ মিলনের বিরাট বাধা স্বরূপে সাম্প্রদায়িকতা

মানুষের সহিত মানুষের অবাধ মিলনের বিরাট বাধা স্বরূপে সাম্প্রদায়িকতা
সকল সম্প্রদায়ের লোকের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক প্রীতির ভাব সঞ্জননের জন্য কাহারও শাস্ত্র-পরিবর্ত্তনের বা ধর্ম্মান্তর-গ্রহণের কোনও প্রয়োজন আছে বলিয়া আমি মনে করি না। মানুষের সহিত মানুষের অবাধ মিলনের বিরাট বাধা স্বরূপে সাম্প্রদায়িকতা, পরমেশ্বরকে সকলের পিতা এবং নিজদিগকে পরস্পর পরস্পরের ভ্রাতা বলিয়া মনন, চিন্তন এবং ধ্যান করিয়া গেলে একমাত্র তাহারই ফলে বাঞ্ছিত সুফল আত্মপ্রকাশ করিবে।

** আসল কথা ব্রহ্মচর্য্য **
"আমরা নারী-জাগরণ, যুব-জাগরণ প্রভৃতি নানা রূপ জাগরণের কথা সর্ব্বদাই বলিতেছি।
কলকণ্ঠে বলিতেছি সভা-সমিতিতে, নিভৃত-গুঞ্জনে বলিতেছি নিজ নিজ গৃহকোণে কিন্তু কথা বলিবার ব্যাপারে আমাদের বিরতি নাই।

ভুলিয়া যাইতেছি যে, ভাব গভীর না হইলে মানুষের কথার কোনও মৃূল্যই হয় না।
মানুষের সহিত মানুষের অবাধ মিলনের বিরাট বাধা স্বরূপে সাম্প্রদায়িকতা,
জাতিভেদ আর স্ত্রী-পুরুষ-ভেদবোধ প্রাচীরাধিক উচ্চতায় দণ্ডায়মান রহিয়াছে।
মানুষ হিমালয় পর্ব্বতও লঙ্ঘন করিতে পারে কিন্তু এই প্রাচীর যেন তাহার অপেক্ষাও অনেক গুণ দুরতিক্রম্য।

নারী ও পুরুষের ভিতরে দৈহিক গঠন-গত বৈষম্য থাকায় নারী-পুরুষের অবাধ মিলন সভ্য জগতে দ্বিতীয়বার আর প্রবর্ত্তিত হইবে না। কারণ, তাহার ফলে মানব-সভ্যতা বিনষ্ট হইয়া যাইতে পারে। কিন্তু অন্য দুইটী বাধার প্রাচীর আমাদের ভাঙ্গিতেই হইবে।
নিঃস্বার্থ ভাবে একাজ আমাদের করিতে হইবে।

প্রিয় কৃষ্ণ ভক্ত আমরা কৃষ্ণ কথা গুলো আমরা সংগ্রহিত করি শুধু মাত্র আপনাদের মাঝে কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি জাগানোর লক্ষে। যাতে করে সবাই নিজের ধর্মের কথা জানতে পারে ও কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি হৃদয়ে জাগ্রত হয়। আমাদের যে কোনো রকম ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হরে কৃষ্ণ......

সম্প্রদায় বৃদ্ধির লোভও একটা স্বার্থই বটে।
আমরা ইহারও ধার ধারিব না। সকল সম্প্রদায়কে আমাদের স্নেহের বক্ষে যেন আমরা টানিয়া আনিতে পারি l

সকল সম্প্রদায়ের লোকের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক প্রীতির ভাব সঞ্জননের জন্য কাহারও শাস্ত্র-পরিবর্ত্তনের বা ধর্ম্মান্তর-গ্রহণের কোনও প্রয়োজন আছে বলিয়া আমি মনে করি না।

পরমেশ্বরকে সকলের পিতা এবং নিজদিগকে পরস্পর পরস্পরের ভ্রাতা বলিয়া মনন, চিন্তন এবং ধ্যান করিয়া গেলে একমাত্র তাহারই ফলে বাঞ্ছিত সুফল আত্মপ্রকাশ করিবে।

জাতিভেদ-সম্পর্কিত বদ্ধমূল ধারণাগুলি হিন্দু-সমাজের মধ্যে এতই দৃঢ়নিবদ্ধ যে, আইন প্রণয়ন করিয়া এই ভেদবুদ্ধি দূর করা যাইবে কিনা, সেই বিষয়েও আমার মনে সন্দেহ জাগে।

ভারতের লক্ষ লক্ষ সাধু-সন্ন্যাসীদিগকে জাতিভেদ বিদূরণের আন্দোলনে কখনো লাগানো সম্ভব হইবে কিনা, তাহা ভবিতব্যই বলিতে পারে।

আমি অনুমান করিতে পারিতেছি না। মানুষ মাত্রেই শুচিতা দ্বারা, সংযমের দ্বারা, ব্রহ্মচর্য্যের দ্বারা, ঈশ্বরানুরাগ দ্বারা, সততা দ্বারা, সত্যবাদিতা দ্বারা ব্রাহ্মণ হইতে পারে,

এই পরম তত্ত্ব ব্যাপকভাবে প্রচারিত হইলে এবং এই তত্ত্বানুসরণকারীদের সংখ্যা স্বভাবের নিয়মে বর্দ্ধিত হইতে থাকিলে অভাবনীয় পরিবর্ত্তন জনজীবনে আসিতে পারে।

ছোট বড় সকলেই কেবল চুরি বাটপাড়ি, অনৈতিকতা, ভ্রষ্টাচার ও অসততার চর্চ্চা করিতে থাকিবে, আর জাতিভেদ-প্রথা লোপ পাইয়া যাইবে, এরূপ অসম্ভব কল্পনা আমার মনের কোণেও উঁকি মারিতে সাহস পাইতেছে না।

সকল আন্দোলনে ঢিলা দিয়া আমরা যদি সংযম ও ব্রহ্মচর্য্যের প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকে জীবনের ব্রত করিয়া নেই,

আমরা যদি নিজ নিজ জীবনে অটুট ব্রহ্মচর্য্যকে ও অক্ষুণ্ণ আদর্শবাদকে মূর্ত্তিমন্ত করিয়া নিবার পরে নারীকে সম্বোধন করিয়া কথা বলি,

যদি যুবকদিগকে ডাক দিয়া কাছে আনি, তবে অল্প চেষ্টায় আপনা আপনি দেশমধ্যে নারী-জাগরণের ও যুব-জাগরণের এক পরম লোভনীয় দৃশ্যের অবতারণা ঘটিবে।
সেই আসল কাজটীর প্রতি প্রতিজনে দৃষ্টি দাও।"

(অখণ্ডমণ্ডলেশ্বর
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব)
(অখণ্ড-সংহিতা,ত্রয়োবিংশ খণ্ড)