সনাতন শাস্ত্রে বর্ণিত একাদশী তত্ত্ব সম্পর্কে

সনাতন শাস্ত্রে বর্ণিত একাদশী তত্ত্ব সম্পর্কে

একাদশী তত্ত্ব প্রসঙ্গে পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে।
একসময় জৈমিনি ঋষি তাঁর গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গুরুদেব!
একাদশী কি?
একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়?
একাদশী ব্রত করলে কি লাভ?

একাদশী ব্রত না করলে কি ক্ষতি? এ সব বিষয়ে আপনি দয়া করে বলুন।
মহর্ষি ব্যাসদেব তখন বলতে লাগলেন...

সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসার সৃষ্টি করলেন। মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন। সেই পাপপুরুষের অঙ্গগুলি বিভিন্ন পাপ দিয়ে নির্মিত হল। পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ ণ্ডরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা স্ত্রীহত্যা, দুই বাহু গোহত্যা পাপ, গ্রীবা ধন অপহরণ, গলদেশ ভ্রুণহত্যা, বক্ষ পরস্ত্রী গমন, উদর আত্মীয়-স্বজন বধ, নাভি শরণাগত বধ, দুই ঊরু গুরুনিন্দা, শিশ্ন কন্যা বিক্রি, মলদ্বার গুপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা পিতৃহত্যা, শরীরের লোম সমস্ত উপপাতক। এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল। 
পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দুঃখ মোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিন গরুড়ের পিঠে চড়ে ভগবান চললেন যমরাজের যমপুরীতে। ভগবানকে দেখে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণ আসনে বসিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য ইত্যাদি দিয়ে যথাবিধি তাঁর পূজা করলেন। যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জীবের আর্তক্রন্দন ধ্বনিত হচ্ছে।
ভগবান প্রশ্ন করলেন, এ আর্তক্রন্দন কেন? যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযন্ত্রনা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চীৎকার শোনা যাচ্ছে। যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্ম দোষে দোষী হয়ে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যবস্থা করব। ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমূর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুন্ঠধামে গমন করল।

শ্রীব্যাসদেব আরও বললেন...
হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত।
কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপ পুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থণা জানাতে লাগল, হে ভগবান ! আমি আপনার প্রজা। আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকুন্ঠের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। 
হে ভগবান, এখন আমার কি হবে? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই যদি বৈকুন্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কি হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন? পাপপুরুষ আরও প্রার্থনা করতে লাগল, হে ভগবান! যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে আমার দুঃখ দূর করুন। একাদশী ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানুষ, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ,জলত-স্হলত, বনপ্রান্তর, পর্বত-সমূদ্র, বৃক্ষ,নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্ত একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্থান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।
হে ভগবান, এখন দেখছি আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেইজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেভে পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্থান প্রদান করুন। পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন, হে পাপপুরুষ! তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে আবির্ভুত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে তা হলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।
#একাদশী_ব্রতের_ফল
সকল পুরাণে মুনিদিগের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)
শ্রীযমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন। (পদ্মপুরাণ)
একাদশীতে যে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত্ব, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। (ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)
যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই ও গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। একাদশীর দিন শস্য জাতীয় দ্রব্য যদি সেটা বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবে তা বৈষ্ণবদের গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করেছিলেন।
(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা ১৫/৮-১০)
অনেকের ধারনা শ্রীপুরীধামে শ্রীজগন্নাথদেবের প্রসাদ ভক্ষণ দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন। ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রলয়কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পঁচে মরতে হয়।(শারদীয় পুরাণ)
হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। (অগ্নিপুরাণ)
বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। (কাত্যায়ন সংহিতা)
যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপসনা করেন, তার হাতের মহামূল্যবান রত্নপরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। (তত্ত্বসাগর)
দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবীকে বলেছেন, হে মহাদেবী যারা হরিবাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ্ণ লৌহাস্ত্র্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে।(স্কন্দপরাণ)

প্রিয় কৃষ্ণ ভক্ত আমরা কৃষ্ণ কথা গুলো আমরা সংগ্রহিত করি শুধু মাত্র আপনাদের মাঝে কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি জাগানোর লক্ষে। যাতে করে সবাই নিজের ধর্মের কথা জানতে পারে ও কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি হৃদয়ে জাগ্রত হয়। আমাদের যে কোনো রকম ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হরে কৃষ্ণ......
No Comment
Add Comment
comment url