Homepage সনাতন হিন্দু ধর্মীয় তত্ব কথা প্রশ্নোত্তর ও ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জীবনী
সমস্ত ইন্দ্রিয়কে কৃষ্ণসেবায় নিযুক্ত করার মাধ্যমে তাদের জয় করা যায়। ইন্দ্রিয় স্বভাবতঃ সবসময় বিষয় ভোগের দিকে ধাবিত হয়। সেই ইন্দ্রিয় সকলকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবারূপ উন্নত স্বাদ প্রদান করলে তারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ঠিক যেভাবে জিহ্বাকে জয় করবার উপায় কৃষ্ণপ্রসাদ সেবা, কৃষ্ণকথা আলোচনা, কর্ণ দিয়ে কৃষ্ণের গুণ শ্রবণ এবং হরিকথা শ্রবণ। নাসিকা দিয়ে কৃষ্ণের চরণে অর্পিত তুলসীর ঘ্রাণ গ্রহণ করা, চক্ষু দিয়ে শ্রীবিগ্রহকে দর্শন করা, হাত দিয়ে মন্দির মার্জন করা।
ভক্তই সবথেকে শ্রেষ্ঠ। জ্ঞানীরা ভগবানের অব্যক্ত নিরাকার রূপকে উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু ভগবানকে প্রাপ্ত হয় না। যোগীরা ভগবানের আংশিক প্রকাশ পরমাত্মা রূপে ভগবানকে হৃদয়ে দর্শন করে থাকে কিন্তু ভগবানের সংগে ভাবের ততটা আদান প্রদান করতে পারে না। ভগবানের ভক্ত ভগবানের সব থেকে নিকটতম হয়ে ভগবদ্ধামে প্রবেশ করে প্রত্যক্ষভাবে ভগবানের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। তাঁর প্রেমময়ী ভক্তিমূলক সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে পারে তাই ভক্ত ভগবানের অত্যন্ত প্রিয়। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এজন্য ভক্তের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছেন।
ভগবানের অস্তিত্বের প্রমাণ লাভ করবার জন্য আমাদের শাস্ত্রের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে। শাস্ত্র থেকে আমরা বুঝতে পারব যে ভগবান আছেন। ভগবান হচ্ছেন তিনি যিনি এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয়ের কারণ। যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ এ জগতে আমরা দেখতে পাচ্ছি - একটি বাড়ী আপনা থেকে তৈরী হয়ে যায় না। বাড়ীটি তৈরী করার জন্য কোন ইঞ্জিনিয়ার বুদ্ধি দিয়ে থাকে এবং মিস্ত্রিরা ইট, বালি, পাথর দিয়ে বাড়ীটি তৈরী করে থাকে। ঠিক সেই রকম এই বিশ্বব্রহ্মান্ড আপনা থেকেই এমন সুশৃঙ্খল হয়ে যায় না। সৃষ্টির পেছনে কারো না কারো হাত আছে। যিনি বুদ্ধি প্রদান করেছেন, এই সমস্ত উপাদান প্রদান করেছেন এবং যিনি এই বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেছেন, তিনিই হচ্ছেন ভগবান।
প্রথম কারণঃ এই জড় জগৎ হচ্ছে সমস্ত চিন্ময় সৃষ্টির একাংশে অবস্থিত ক্ষুদ্র কারাগার সদৃশ। তাই যারা ভগবানের প্রদত্ত নিয়ম ভঙ্গ করে, তাদেরকে এই জড় জগতে আসতে হয়। এখানে বহিরঙ্গা শক্তি দুর্গাদেবী জড় জগৎরূপ দুর্গের দেখাশুনা করেন এবং ত্রিতাপ ক্লেশ দিয়ে জীবকে শাসন করে শিক্ষা প্রদান করে থাকেন।
দ্বিতীয় কারণঃ ভগবান এই জড় জগৎ এইজন্য সৃষ্টি করেছেন যে, জীব যেন তার মিথ্যা প্রভুত্ব করার আকাঙ্ক্ষা ও ভোগবাসনা পরিত্যাগ করে ভগবদ্ভজনের মাধ্যমে ভগবদ্ধামে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে আবার ফিরে যেতে পারে।
আত্মার আকার চুলের অগ্রভাগের দশ হাজার ভাগের এক ভাগ। তা এতই ক্ষুদ্র যে এই জড় চক্ষু দিয়ে বা যন্ত্রের সাহায্যে আত্মাকে দর্শন করা যায় না। এ ছাড়া আত্মা জড় পদার্থ নয়, তাই জড়ীয় ইন্দ্রিয় ও যন্ত্র দিয়ে তা দেখা অসম্ভব।
এক-- যে সমস্ত জীব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট আত্মসর্মপণ করে, তারা ভগবদ্ভজনের প্রভাবে সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত হয়ে নিত্য আলয় ভগবদ্ধামে গমন করে। সেখানে তারা দিব্য শরীর প্রাপ্ত হয়ে নিত্যকালের জন্য ভগবানের সেবায় নিযুক্ত হয়।দুই-- যাদের জড়জাগতিক কামনা বাসনা আছে, তারা মৃত্যুর মাধ্যমে ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম দিয়ে তৈরী স্থুল শরীরকে পরিত্যাগ করে। কিন্তু মন, বুদ্ধি ও অহংকার নির্মিত সূক্ষ্ম শরীর তাদের পাপ ও পূর্ণ কর্মফল বহন করে। পাপ কর্মের ফলস্বরূপ তারা যমযাতনা ভোগ করে আর পূর্ণ কর্মের ফলস্বরূপ স্বর্গসুখ ভোগ করে থাকে। এই ভোগের পর তাদের নিজ নিজ কর্ম ও চেতনা অনুসারে তারা আর একটি স্থুল জড় শরীর প্রাপ্ত হয়। এভাবে ৮৪ লক্ষ জীব প্রজাতির যে কোন একটি প্রজাতিতে তাদের জন্মগ্রহণ করতে হয়।
জীবের 'স্বরূপ' হয় কৃষ্ণের নিত্যদাস।
1)জড় বস্তুর দ্বার নির্মিত শরীর সদা পরিবর্তনশীল, নশ্বর, বিনাশশীল, অনিত্য, স্থুল, বহিরঙ্গা জড়া প্রকৃতির সৃষ্টি। জড়দেহ অচেতন, পরিমাপযোগ্য; তাকে কাটা যায়, শুকানো যায়, পোড়ানো যায়, ভেজানো যায়, তা দুঃখ ক্লেশের আধার স্বরূপ।2)আত্মা অপরিবর্তনীয়, অব্যয়, অক্ষয়, অবিনশ্বর নিত্য, সনাতন, সূক্ষ্ম, অপরিমেয়, ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, চেতন, অনেক, অদাহ্য, অক্লেদ্য, অশোষ্য, সর্বব্যাপ্ত, আনন্দময়।
দেহে আত্মার অবস্থানের লক্ষণ হচ্ছে দেহে পরিব্যাপ্ত চেতনা। যে পর্যন্ত একটি দেহে আত্মার উপস্থিতি থাকে, সে পর্যন্ত ঐ জীর দেহে চেতনা প্রকাশিত থাকে। আত্মা-দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলে দেহ একটি অচেতন, পচনশীল, জড়পিণ্ডে পরিণত হয়।
জীব তিন প্রকারের ১) নিত্যবদ্ধ ২) নিত্যমুক্ত ৩) বন্ধনমুক্ত। ভগবদবিমুখ জীব যারা এই জড় জগতে ত্রিগুণাত্মিকা মায়াশক্তির প্রভাবে বদ্ধ হয়ে আছে ও জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, তাদেরকে নিত্যবদ্ধ জীব বলা হয়।
যে সমস্ত জীব ভগবদ্ভজন করে এই বদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় জগতে প্রবেশে উন্মুখ, তাদেরকে বন্ধনমুক্ত জীব বলা হয়।
জড় জগতে অবস্থান কালে জীবাত্মা যে তিন রকম অবশ্যম্ভাবী দুঃখ লাভ করে তাকে বলা হয় ত্রিতাপ ক্লেশ। সেগুলি হচ্ছে---১) আধিভৌতিক ক্লেশ২) আধিদৈবিক ক্লেশ৩) আধ্যাত্মিক ক্লেশ।জীব তার নিজের মন ও শরীর থেকে যে ক্লেশ প্রাপ্ত হয় তা আধ্যাত্মিক ক্লেশ। যেমনঃ মানসিক কষ্ট এবং রোগ ব্যাধি ইত্যাদি। অন্য জীব থেকে প্রাপ্ত ক্লেশকে আধিভৌতিক ক্লেশ বলা হয়। যেমনঃ সাপের কামড়, মশা-মাছি, চোর-গুণ্ডার উপদ্রব ইত্যাদি। দৈবক্রমে অর্থাৎ দেবতাদের দ্বারা প্রদত্ত যে ক্লেশ, তাকে আধিদৈবিক ক্লেশ বলা হয়। যেমনঃ অনাবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প।
জীবাত্মা যে শরীরের মধ্যে অবস্থান করে সেই শরীর কৌমার থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বার্ধক্য অবস্থায় ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু দেহস্থ আত্মার কোন পরিবর্তন হয় না। ঠিক যেমন পুরানো কাপড় পরিত্যাগ করে নূতন কাপড় পরিধান করা হয়, ঠিক তেমনি জীবাত্মা অব্যবহারযোগ্য জরাজীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে তার কর্ম এবং বাসনা অনুসারে আরেকটি নূতন শরীর গ্রহন করে। আত্মার এই নূতন শরীর ধারণকে বলা হয় পুনর্জন্ম।
জীব এই জগতে বিভিন্ন প্রকারের জড় কামনা বাসনা নিয়ে কর্ম করে থাকে। কিন্তু সে তার প্রতিটি কৃতকর্মের ফলভোগ করতে বাধ্য থাকে। সেই কর্ম অনুসারে তাকে বারবার জড় শরীর ধারণ করতে হয়। নূতন শরীরে সে নূতন কর্ম করে ও ঐসব কর্মের ফল ভোগের জন্য আবার তাকে জন্ম নিতে হয়। এ রকম চলতেই থাকে। এইরূপ বদ্ধ অবস্থাকে বলা হয় কর্ম বন্ধন।
জীবের চরম লক্ষ্য হচ্ছে - পরমেশ্বর ভগবানের সংগে তার হারানো সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমূলক সেবায় নিযুক্ত হওয়া, কৃষ্ণপ্রেম লাভ করা।
শ্লোক ও শ্লোকার্থমন্ত্র - Krishno-Kothaমূর্তিপূজা সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তরভগবান শ্রী কৃষ্ণের অমৃত লীলা কথা৩০টি প্রনাম মন্ত্রের তালিকাযে সকল মানুষ গীতার জ্ঞান বুঝে নাহিন্দু ধর্মীয় বিষয়ক ১০০টি প্রশ্ন ও উত্তরশ্রীমদ্ভগবদগীতার-অর্জুন বিষাদ-যোগশ্রীমদ্ভগবদ্গীতার মাহাত্ম্য পড়ুনমঙ্গলাচরণ ( Moggolacoron )গীতায় যে ৫টি জিনিস সর্ম্পকে জানা পারিপ্রশ্ন ও উত্তর - Krishno Kothaশ্রী শ্রী দেবী সরস্বতী - Krishno Kothaসরস্বতী পুজোর আগে কুল (বরই) খাইনা কেন?মানুষের অবাধ মিলনের বিরাট বাধা স্বরূপে সাম্প্রদায়িকতাসর্বজীবের ভগবান শ্রীকৃষ্ণতুলসী তত্ত্বভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনীনীতিশিক্ষামূলক গল্প২৮ টি নরকের মধ্যে অন্যতম "অসিপত্রবন"গুরু কে? যারা জানতে আগ্রহীপ্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপূজা করবেন কিভাবে?হিন্দু ধর্মের লোকেরা হাতে লাল সুতো বাঁধে কেন?শ্রী রামচন্দ্রের কিছু অমৃত বাণীপবিত্র_বেদ এর কিছু চমৎকার অমৃত বাণীরাধা কৃষ্ণের দিব্য সম্পর্কসিঁন্দুর সম্পর্কে তথ্যকলিযুগে ধর্ম নিয়ে এত রেষারেষির কারণসনাতন শাস্ত্র মতে মায়ের স্থান কোথায় সে সম্পর্কেনবধারা ভক্তি সম্পর্কেমৃত্যু রহস্য সম্পর্কেসনাতন শাস্ত্রে বর্ণিত একাদশী তত্ত্ব সম্পর্কেশ্রী কৃষ্ণের ভক্ত শুদ্ধ ভক্ত সর্বদা আমার হৃদয়ে থাকেনভগবান শ্রী কৃষ্ণের অষ্টশত নামগীতাপাঠ প্রসঙ্গ - Krishno Kothaগীতায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী