শ্রীমদ্ভগবদগীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ধ্যানযোগ by Krishno Kotha

শ্রীমদ্ভগবদগীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ধ্যানযোগ by Krishno Kotha
এই অধ্যায় , অষ্টাঙ্গ যোগের মাধ্যমে কিভাবে মন ও ইন্দ্ৰিয়সমূহবে বিষয়ভোগের চেষ্টা থেকে সংযত করা যায় , ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ তা ব্যাখ্য করছেন। ইন্দ্ৰিয়বেগে অস্থির মনকে সংযত না করতে পারলে, আমাদের নিজের মনই নিজের পরম শত্ৰুতে পরিণত হয় , কারণ তা আমাদে পারমাৰ্থিক প্ৰগতি রুদ্ধ করে। 

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন —
হে পাণ্ডব । যথাৰ্থ যোগী বা সন্ন্যাসী হচ্ছেন তিনি , যিনি ফলাকাঙক্ষাশূন্য হয়ে কৰ্ম করেন ; যিনি কৰ্মত্যাগ করেন তিনি নন। সন্ন্যাস আর যোগ একই কথা, কারণ ইন্দ্ৰিয়সুখ ভোগের বাসনা ত্যাগ না করলে যোগী হওয়া যায় না। এইভাবে সমস্ত জড় সুখভোগের সঙ্কল্প যিনি ত্যাগ করেছেন, তাকে যোগারুঢ় বলা হয় ।এই অবস্থায় কৰ্তব্যকর্মের কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না, কিন্তু নবীন যোগীদের নিষ্কাম কৰ্মই উত্তম সাধন। হে অর্জুন ! মন জীবের বন্ধুও হতে পারে, শত্ৰুও হতে পারে ।

মনের দ্বারা নিজেকে জড় - বন্ধন হতে মুক্ত করা উচিত। আত্মাকে মন দ্বারা অধঃপতিত করা উচিত নয়। যিনি মনকে জয় করেছেন, মন তার পরম বন্ধু। কিন্তু যে তা করতে পারেনি, মন তার পরম শত্ৰু। জিতেন্দ্ৰিয় ও প্ৰশান্ত যোগারুঢ় ব্যক্তি পরমাত্মাকে ডপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনি শীত - উষ্ণে , সুখ - দুঃখে এবং সন্মান - অপমানে অবিচলিত থাকেন।

যে যোগী শাস্ত্ৰজ্ঞান ও তত্ত্ব অনুভূতিতে পরিতৃপ্ত , যিনি চিন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত ও জিতেন্দ্ৰিয় এবং যিনি মৃৎখণ্ড , প্ৰস্তর ও সুবৰ্ণে সমদৰ্শী , তিনি যোেগারুঢ় বলে কথিত হন । যিনি সুহৃৎ , মিত্ৰ , শত্ৰু , উদাসীন , মধ্যস্থ , মৎসৱ , বন্ধু , ধাৰ্মিক ও পাপাচারী — 
সকলের প্রতি সমবুদ্ধি , তিনিই শ্ৰেষ্ঠতা লাভ করেন।যোগারূঢ় ব্যক্তি সর্বদা একান্তে অবস্থিত হয়ে মনকে সমাধি - যুক্ত করবেন। তিনি বিষয় - বাসনা বৰ্জন করবেন এবং ফলাকাঙক্ষা রহিত হবেন ।

এই সাইটের সবস্ত কৃষ্ণ কথা সংগ্রহিত .................ভুল ক্ষমা করবেন।শুধু মাত্র কৃষ্ণ ভক্তি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা সংগ্রহ করে থাকি।আমাদের কৃষ্ণ কথা সাইটে এসে কৃষ্ণ কথা  পড়ে  যদি কোনো রকম কিছু জানতে পারেন। তাহলে আমাদের সপ্ন পূরণ হবে। আপনার অনুভূতি কমেন্টর মাধ্যমে আমাদের জানাবেন।

এর পর যোগাভ্যাসের পদ্ধতি বৰ্ণনা করে ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ বললেন, যোগী শুদ্ধ আসনে স্থিরভাবে উপবিষ্ট হবেন। ইন্দ্ৰিয় ও চিত্তবৃত্তিকে নিয়ন্ত্ৰিত করে, তিনি নাসাগ্রে মনকে একাগ্র করবেন। তিনি ব্ৰহ্মচৰ্য ব্ৰতে স্থিত হয়ে প্ৰশান্ত ও ভয়শূন্য চিত্তে মনকে সমস্ত জড় বিষয় থেকে প্ৰত্যাহার করবেন। এরপর তিনি তার হৃদয়ে আমার ধান করে মনকে আমাতে সমাহিত করবেন। এইভাবে তিনি যোগ অভ্যাস করবেন। এইভাবে দেহ - মনের বহিমুখ কাৰ্যকলাপ সংযত করে নিয়ত যোগ অভ্যাসের ফলে যোগী জড়বন্ধন হতে নিমুক্ত হয়ে শান্তি লাভ করেন এবং আমার ধাম প্ৰাপ্ত হন।

অতি ভোজনকারী বা অনাহারী, অতি নিদ্ৰাপ্রিয় বা নিদ্ৰাহীন — এদের কেউ যোগী হওয়ার উপযুক্ত নয়। আহার , নিদ্ৰা ইত্যাদি যিনি পরিমিতরুপে করেন তিনি যোগাভ্যাসের দ্বারা দুঃখ জয় করতে সমৰ্থ হন। যোগী যখন সমস্ত জড়বাসনায় নিম্পপৃহ হয়ে মনকে সংযত করে আত্মায় অবস্থান করেন, তখন তিনি যোগযুক্ত অবস্থা লাভ করেন । বায়ুহীন স্থানে নিষ্কম্প দীপশিখার মতো যোগীর চিত্তও অবিচলিত থাকে । তিনি শুদ্ধ হৃদয়ে আত্মাকে উপলব্ধি করে আত্মাতেই পরম আনন্দ লাভ করেন —

এই অবস্থাকে বলা হয় যোগসমাধি ।
এইঅবস্থা লাভ হলে অন্য কোন লাভ এর চেয়ে বেশি মনে হয় না , তখন গুরুতর দুঃখেও চিত্ত বিচলিত হয় না ।
জড় বিষয়ের সংযোগ বিয়োগজনিত দুখ হতে এই হচ্ছে প্ৰকৃত মুক্তি এবং এই হচ্ছে অষ্টাঙ্গ - যোগের সিদ্ধির অবস্থা ।

বিষয়াসক্তর মনে সব সময় ইন্দ্ৰিয়ভোগের কামনা ও বাসনার সংকল্প জাগে । ফলে মন সব সময় চঞ্চল , অস্থির থাকে । বিশ্বাস , ধৈৰ্য ও অধ্যবসায় সহকারে বুদ্ধির দ্বারা মনকে স্থির করতে হয় । সমস্ত সংকল্প ত্যাগ করে , মনকে জড় বিষয় হতে প্ৰত্যাহত করে আত্মায় নিবিষ্ট করতে হয় এবং এইভাবে সমাধিস্থ হতে হয় । তখন যোগীর চিত্ত রজোবৃত্তি রহিত হয় ।
তিনি সমস্ত কলুষ ও পাপ থেকে মুক্ত হয়ে প্ৰশান্ত হন । 

এইভাবে তিনি ব্ৰহ্মভূত অবস্থা প্ৰাপ্ত হন এবং ব্ৰহ্ম - সংস্পৰ্শরীপ পরম সুখ আস্বাদন করেন ।যিনি প্ৰকৃত যোগী , তিনি যোগযুক্ত হয়ে সর্বভূতে আমাকে দৰ্শন করেন । এই রকম যোগীর কাছে কখনও আমি অদৃশ্য হই না , তিনিও আমার দৃষ্টির অগোচর হন না । যে যোগী আমাকে সর্বভূতে পরমাত্মারুপে বিরাজমান জেনে একাগ্ৰচিত্তে আমার ভজনা করেন , তিনি সর্বাবস্থায় আমাতেই অবস্থান করেন ।

হে অৰ্জ্জুন ! যিনি সকলকে নিজের মতো দেখেন এবং জীবের সুখ - দুঃখকে নিজের সুখ - দুঃখ বলে মনে করেন , আমার মতে তিনিই সর্বশ্ৰেষ্ঠ যোগী।

তখন অর্জুন বললেন — 
হে মধুসূদন ! তুমি যে যোগ উপদেশ করলে , তা আমার পক্ষে সাধন করা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না । কারণ হে কৃষ্ণ মন অত্যন্ত চঞ্চল ও প্ৰবল বিক্ষোভ সৃষ্টিকারী । এই রকম মনকে জড় বিষয় থেকে নিবৃত্ত করে বশীভূত করা বায়ুকে বশীভূত করার থেকেও কঠিন বলে আমার কাছে মনে হয় ।

তখন ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ বললেন — 
হে মহাবাহো ! মন অত্যন্ত চঞ্চল , একে নিয়ন্ত্ৰণ করা খুব কঠিন । কিন্তু নিয়মিত অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে বশীভূত করা নিশ্চয়ই সম্ভব । কিন্তু যার মন অসংযত , তার পক্ষে আত্ম - উপলব্ধি অৰ্জন করা অত্যন্ত কঠিন ।

অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন — হে কৃষ্ণ ! যদি কেউ শ্ৰদ্ধা সহকারে এই আত্ম উপলব্ধির পন্থা গ্ৰহণ করেন এবং অনুশীলন করতে থাকেন , কিন্তু পরবর্তীকালে জাগতিক আসক্তির ফলে এই পথ থেকে বিচ্যুত হন এবং পূৰ্ণ সিদ্ধি অৰ্জন করতে না পারেন , তা হলে তার কি গতি হয় ?

হে কৃষ্ণ ! সেই ব্যক্তি কি জাগতিক ও পারমাৰ্থিক — উভয় সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে ছিন্ন মেঘের মতো একেবারে হারিয়ে যায় ?

হে কৃষ্ণ ! কেবল তুমিই আমার এই সংশয় দূর করতে পার , আর কেউ নয় । তাই দয়া করে পূৰ্ণরুপে এই সন্দেহের নিরসন কর ।

অর্জুনের এই প্রশ্নের উত্তরে ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ বললেন — 
হে পাৰ্থ যিনি কল্যাণকর পারমাৰ্থিক পথ অবলম্বন করেছেন , পূৰ্ণ সিদ্ধি না পেলেও তার কখনও অধোগতি হয় না । এই জগতে কিংবা পরলোকে কোথাও তার কোন দুৰ্গতি হয় না । এই রকম যোগভ্ৰষ্ট ব্যক্তি উচ্চতর পুণ্যাত্মাদের জন্য নিদিষ্ট স্বৰ্গাদি লোকে অনেক বৎসর সুখে বাস করেন । তারপর তারা শ্ৰী ও শুচিসম্পন্ন ব্ৰাহ্মণ বা বণিকের গৃহে অথবা জ্ঞানবান যোগীগণের কুলে অত্যন্ত দুৰ্লভ জন্ম লাভ করেন । তখন তিনি বিগত জন্মে যেখানে শেষ করেছিলেন , সেখানে থেকে পুনরায় স্বতঃস্বৰ্তভাবে যোগসাধনা শুরু করেন ।
আগের জন্মের থেকে অধিক প্ৰযত্ন করে তিনি ক্ৰমশ পাপমুক্ত , বিশুদ্ধ হন । এইভাবে বহু জন্মের শুভ সংস্কারের দ্বারা তিনি পূৰ্ণ সিদ্ধি প্ৰাপ্ত হন ও পরম গতি লাভ করেন ।

ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ অর্জুনকে আরও বললেন , সমস্ত রকম তপস্বী , জ্ঞানী এবং সকাম কৰ্মীদের থেকে যোগী শ্ৰেষ্ঠ । তাই হে অৰ্জ্জুন ! তুমি যোগী হও । আর যিনি শ্ৰদ্ধাবান চিত্তে মদগত হয়ে আমার ভজনা করেন , অন্তরে আমাকেই চিন্তা করেন এবং অন্তরঙ্গভাবে আমার সঙ্গে যুক্ত , তিনিই সকল যোগীগণের
মধ্যে শ্রেষ্ঠ যোগী''।। হরেকৃষ্ণ।।


"হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে" "হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে"
"হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে" "হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে"
"হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে" "হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে"
"হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে" "হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে"
"হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে" "হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে"

Next Post Previous Post