দেবর্ষি নারদ মনির কথা - Krishno Kotha

দেবর্ষি নারদ মনির কথা - Krishno Kotha

নারদ মনির কথা

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে- ব্রহ্মার মানসপুত্র। ইনি ত্রিকালজ্ঞ, বেদজ্ঞ ও তপস্বী। নার শব্দের অর্থ জল। ইনি সবসময় তর্পণের জন্য জলদান করতেন বলে এঁর নাম হয় নারদ। ভগবত মতে- ইনি জনৈক ব্রাহ্মণের এক দাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি তাঁর মায়ের আদেশে সবসময় যোগীদের সেবা করতেন এবং এই যোগীদের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে ধর্মপরায়ণ হয়ে উঠেন।

এই সময় সাপের কামড়ে তাঁর মায়ের মৃত্যু ঘটে। এরপর ইনি তপস্যার জন্য বনে যান। ইনি মাত্র একবার ঈশ্বরের দর্শন লাভ করতে সক্ষম হন। ঈশ্বরকে পাবার জন্য আকুল চেষ্টা করেও ঈশ্বরকে ইনি দ্বিতীয় বার দর্শন করতে পারলেন না। এরপর ইনি বিভিন্ন সাধুদের সেবা করে তাঁর বুদ্ধিকে দৃঢ় করেন এবং ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন থেকেই পৃথিবী ভ্রমণ করতে থাকেন। এই ভ্রমণের মধ্য দিয়েই ইনি ঈশ্বরে লীন হয়ে যান।

এরপর কল্প শেষে বিষ্ণু যখন সমুদ্রের জলে শায়িত ছিলেন, তখন তাঁর নিঃশ্বাস যোগে নারদ বিষ্ণুর অন্তরে প্রবেশ করেন। বিষ্ণু তাঁর নিদ্রা ত্যাগ করে যখন সৃষ্টির ইচ্ছা করেন তখন তাঁর ইন্দ্রিয় থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি হয় এবং ব্রহ্মার মন থেকে নারদ আবির্ভূত হন। ইনি সেই থেকে দেবদত্ত বীণায় হরি গান করে সর্বত্র ভ্রমণ করতে থাকেন। ব্রহ্মাবৈবর্ত পুরাণের মতে- এঁর জন্ম হয়ে ছিল ব্রহ্মার কণ্ঠ থেকে। প্রথমে ব্রহ্মা তাঁকে সৃষ্টির ভার দেন। 

আরো জেনে নিই...    


সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত থাকলে ঈশ্বর চিন্তা বিঘ্নিত হবে বিবেচনা করে ইনি ব্রহ্মার আদেশ মানতে রাজী হলেন না। ফলে ব্রহ্মা তাঁকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, নারদকে গন্ধমাদন পর্বতে গন্ধর্বযোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হবে। যথা সময়ে ইনি গন্ধর্বযোনিতে জন্মগ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর নাম ছিল উপবর্হণ। এই জন্মে ইনি চিত্ররথের ৫০টি কন্যাকে বিবাহ করেন। এর পরে ইনি এক আসরে রম্ভার নাচ দেখে উত্তেজিত হলে, তাঁর বীর্যপাত হয়।

এতে ব্রহ্মা আরও ক্রুদ্ধ হয়ে- তাঁকে মানুষ হয়ে জন্মানোর অভিশাপ দেন। ব্রহ্মার এই অভিশাপে কলাবতী নামক এক নারীর গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য কান্যকুব্জের গোপরাজ দ্রুমিলের বন্ধ্যা স্ত্রী ছিলেন কলাবতী। একদিন কশ্যপ স্বর্গের অপ্সরা মেনকাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তাঁর বীর্যস্খলন হয়। কলাবতী এই বীর্য পান করে গর্ভবতী হন এবং এই গর্ভ থেকে অভিশপ্ত নারদের জন্ম হয়। ব্রাহ্মণরা নারদকে ব্রহ্মার পুত্র জেনে তাঁকে বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত করেন। এরপর তিনি বিষ্ণুর ধ্যান করতে করতে ব্রহ্মে লীন হয়ে যান।

প্রিয় কৃষ্ণ ভক্ত আমরা কৃষ্ণ কথা গুলো আমরা সংগ্রহিত করি শুধু মাত্র আপনাদের মাঝে কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি জাগানোর লক্ষে। যাতে করে সবাই নিজের ধর্মের কথা জানতে পারে ও কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি হৃদয়ে জাগ্রত হয়। আমাদের যে কোনো রকম ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হরে কৃষ্ণ.....

কয়েক কল্প পরে ব্রহ্মা পুনরায় সৃষ্টি আরম্ভ করলে আবার ইনি জন্মগ্রহণ করেন। এইবার ইনি বীণা যোগে সঙ্গীত পরিবেশন করে সকলকে মোহিত করা শুরু করেন। পুরাণ মতে- নারদ সর্বদাই নানা রাগ-রাগিণী যুক্ত সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। কিন্তু সবসময় তাঁর সঙ্গীতে কিছু না কিছু ত্রুটি থেকে যেতো। কিন্তু নারদ এই ত্রুটি নিজে বুঝতে পারতেন না, সেই কারণে নারদ তাঁর নিজের গান নিয়ে খুব গর্ব করতেন। নারদের এই গর্বকে খর্ব করার জন্য একবার রাগ-রাগিণীরা বিকলাঙ্গ নর-নারীর রূপ গ্রহণ করে নারদের যাত্রা পথে উপস্থিত হলেন। নারদ এই বিষয় অবগত ছিলেন না বলে- ইনি উক্ত বিকলাঙ্গ নারী-পুরুষরূপী রাগ-রাগিণীকে তাঁদেরকে বিকলাঙ্গের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। 

তখন তাঁরা বললেন যে, তাঁরা নারদের বিকৃত সঙ্গীতের রূপ। নারদ এই কথা শুনে ব্যাকুল হয়ে, তাঁদেরকে প্রকৃষ্টরূপে সঙ্গীত পরিবেশনের উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তাঁরা বললেন যে, মহাদেবের গান শুনলে তাঁদের বিকলাঙ্গতা দূর হবে। এরপর নারদ মহাদেবের কাছে সঙ্গীত শোনার আবেদন জানালে- মহাদেব জানালেন যে, প্রকৃষ্ট শ্রোতা ছাড়া তিনি গান শোনাবেন না।

পরে নারদ মহাদেবের পরামর্শ অনুসারে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু-কে অনুরোধ করে আসরে নিয়ে আসেন। মহাদেবের গান শোনার পর রাগ-রাগিণীদের বিকলাঙ্গতা দূর হয়। এই সঙ্গীতের মর্ম ব্রহ্মা বুঝতে পারলেন না। কিন্তু বিষ্ণু কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে ইনি আংশিক দ্রবীভূত হন। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশ ব্রহ্মা তাঁর কমণ্ডলুতে ধারণ করেন। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশই গঙ্গা নামে খ্যাত হয়। নারদের সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ লক্ষ্য করে, বিষ্ণু উলুকেশ্বর নামক এক গন্ধর্বের কাছে তাঁকে সঙ্গীত শিক্ষার জন্য পাঠান।

তাঁকে বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়। ইনি কৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্ত পূর্বেই কংসকে জানিয়েছিলেন, ধ্রুবের তপস্যায় মন্ত্রদাতা ছিলেন, মহাদেব-পার্বতীর বিবাহের ঘটক ছিলেন, দক্ষের অহঙ্কার নাশে ইনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। রাময়ণের মূল কাহিনী তিনি বাল্মীকিকে শুনিয়েছিলেন। পরে এই কাহিনী অবলম্বনে বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন।

এছাড়া ইনি দূত হিসাবেও বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ইনি কথা গোপন করে রাখতে পারতেন না। কখনো কখনো অবিবেচকের মতো কথা বলে, বিপর্যয় ডেকে আনতেন। কংসের কাছে কৃষ্ণের কাছে জন্মগ্রহণ এবং কৃষ্ণকর্তৃক কংসবধের কথা বলেছিলেন। বিন্ধ্যপর্বতের কাছে সুমেরুর গুণকীর্তন করে, পৃথিবী বিপর্যস্ত করেন। পরে এই বিপর্যয় থেকে অগস্ত্য মুনি পৃথিবী রক্ষা করেন।

কৃষ্ণ কথা | Krishno Kotha | সনার্তনী বাংলা কথা
জয় রাধে গৌবিন্দ 

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে 
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url