শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অমৃত বাণী - Krishno Kotha

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অমৃত বাণী - Krishno Kotha

কলির জীবের কল্যাণ আর উদ্ধারের জন্য সচ্চিদানন্দঘন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ধরায় আবির্ভূত হন নিমাই রুপে। সময়ের পরিক্রমায় তিনি হয়ে ওঠেন ভগবানের অবতারী গৌর সুন্দর ,, গৌরহরি ,, গৌরাঙ্গ ইত্যাদি নামে মহাপ্রভু রুপে শ্রীচৈতন্যভাগবত থেকে আমরা মহাপ্রভুর অনেক বাণী পাই।যার মধ্যে প্রধান তেত্রিশটি বাণী।সেই বাণী সমূহ'ই ভগবদ্ভক্তদের জন্য আজ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।সবাই ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন।

০১/ শান্তি নয় ,, যজ্ঞ নয় ,, যোগ তপস্যা নয় ,, ত্রিতাপ ক্লিষ্ট কলির জীবের পক্ষে শুধু নাম ,, কৃষ্ণনাম।কৃষ্ণনাম উচ্চারণ ও কৃষ্ণনাম কীর্ত্তন সর্ব্ব সাধনার সার।নামেই তৃপ্তি ,, নামেই মুক্তি ,, নামেই যত শান্তি ,,নামেই সর্ব্বোচ আনন্দ।

০২/ শ্রীকৃষ্ণের তিনটি শক্তি।চিৎশক্তি ,, বহিরঙ্গা শক্তি আর জীবশক্তি।চিৎশক্তি হলো অন্তরঙ্গা নামে স্বরুপ শক্তি।মায়াতন্ত্রোক্ত হলো জগৎ কারণ বহিরঙ্গা শক্তি। আর জীবশক্তি হলো তটস্হা শক্তি।এই তিন শক্তিরই আশ্রয় হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

০৩/ বুদ্ধি যেমন আত্মার আশ্রয় থেকেও তার গুনের সাথে যুক্ত হন না ,, তেমনি ঈশ্বর মায়াতে থেকেও তাঁর সুখ দুঃখাদি গুনের সাথে যুক্ত হন না।এটাই হলো তাঁর ঐশ্বরিক শক্তি।

০৪/ শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর।তাঁর বিগ্রহ সচ্চিদানন্দ-ময়। তিনি অনাদির আদি গোবিন্দ ,, তিনি সকলের আদি।তিনি সমস্ত কারণের কারণ অর্থাৎ মূলের মূল।

০৫/ একটি মাত্র তুলসী পত্র ও এক গন্ডুস জল দিলেই ভক্ত বৎসল ভগবান ভক্তদের কাছে আত্মবিক্রয় করে থাকেন।যে ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণকে তুলসী ও জল দেয় ,,তাঁর ঋণ শোধ করার কথা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চিন্তা করেন।

০৬/ গোপীগণের যে প্রেম ,, তা হলো আত্মসুখ হীন ,, শ্রীকৃষ্ণের তৃপ্তিতেই তাঁদের তৃপ্তি ,, শ্রীকৃষ্ণের আনন্দে তাঁদের আনন্দ।এই প্রেম কামগন্ধ হীন।

০৭/ প্রকৃতির উপরে পরব্যোম নামে যে ধাম ,,সেখানেই শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ বিভূতি আদি গুনে গুনবান।আর শ্রীকৃষ্ণ

অবতারের স্থিতি হলো তিন স্থানে ,, দ্বারকা ,, মথুরা ওগোকুলে।তার মধ্যে সবার উপরে হলো ব্রহ্মলোক ধাম শ্রীগোকুল।

=========================================================
এই সাইটের সবস্ত কৃষ্ণ কথা সংগ্রহিত .................
ভুল ক্ষমা করবেন।শুধু মাত্র কৃষ্ণ ভক্তি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা সংগ্রহ করে থাকি।
আমাদের কৃষ্ণ কথা সাইটে এসে কৃষ্ণ কথা পড়ে যদি কোনো রকম কিছু জানতে পারেন।
তাহলে আমাদের সপ্ন পূরণ হবে।
আপনার অনুভূতি কমেন্টর মাধ্যমে আমাদের জানাবেন।

-------------------------------------------------------------------------------------------------

০৮/ যে মহাবিষ্ণুর একটি মাত্র নিঃশ্বাস কালকে অবলম্বন করে তাঁর লোমকুপ জাত ব্রহ্মা ,, বিষ্ণু ,, মহেশ্বর প্রমুখ ব্রহ্মান্ডনাথ গন জীবন ধারণ করেন, সেই মহাবিষ্ণু গোবিন্দের অংশ কণা।

০৯/ শ্রীকৃষ্ণ প্রেমের স্বভাব এই যে ,, লঘুর মতো গুরুর মনে ও সমান দাস ভাব এনে দেয়।তার প্রমাণ হলো শ্রীনন্দ মহারাজ।শ্রীকৃষ্ণের পিতা তিনি পরম গুরু।তবু তিনি শ্রীকৃষ্ণের চরণে আশ্রয় কামনা করেন।

১০/ ভক্তগণের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি পিতা ,, মাতা ,, গুরু ,, সখা যে যে অভাবই থাক না কেন, শ্রীকৃষ্ণ প্রেমের স্বভাবে তাঁদের মধ্যে দাস্য ভাবের স্ফুরণ হয়।

১১/ বেদান্ত হলো ঈশ্বরের বাক্য।ব্যাসরুপে নারায়ণ নিজেই তা প্রকাশ করেছেন।ঈশ্বরের বাক্যে প্রেম প্রমাদ লালসা এসব নেই।

১২/ ব্রহ্ম নিরাকার হবেন কেন ?? বেদ পুরাণে যে ব্রহ্মের কথা বলা হয়েছে,তিনি তো ঐশ্বর্যময় সাক্ষাৎ ঈশ্বর।যার থেকে জগতের উৎপত্তি ,, যার দ্বারা জগত প্রতিপালিত ,, যাতে সব লয়প্রাপ্ত হয় ,, তিনিই তো ব্রহ্ম।অপাদান, করণ ও অধিকরণ কারক।এই তিনটি ব্রহ্মের চিহ্ন।ব্রহ্ম যদি সাকার না হন,তিনি এসব কাজ করবেন কেন ??

১৩/ ঈশ্বরের স্বরুপ সৎ ,, চিৎ ,, আনন্দময়।তিন অংশে তিন রুপ চিৎ শক্তি।আনন্দাংশে হ্লাদিনী শক্তি ,, সৎ অংশে সন্ধিনী শক্তি আর চিৎ অংশে সংবিৎ শক্তি।অন্তরঙ্গা চিৎশক্তি ,, তটস্হা জীবশক্তি ,, বহিরঙ্গা মায়া ,, এই তিনে করে প্রেমভক্তি !! ষড়বিধ ঐশ্বর্য প্রভুর চিৎশক্তির বিলাস।এমন শক্তি তোমরা মান না ,, এতো স্পর্ধা তোমাদের ?? ঈশ্বর জীবে ভেদ থাকে না ,,জীবকে ঈশ্বরের সাথে অভেদ কর কোন সাহসে ??

১৪/ ভগবানে ভক্তিই হলো পরম পুরুষার্থ।ভগবানের গুনগান ,, তাঁর ভজনই কলির জীবের শ্রেষ্ঠ পথ।

১৫/ গৃহহারা ধর্ম হলো ,, নিরন্তর শ্রীকৃষ্ণ সেবা আর শ্রীকৃষ্ণে নাম সংকীর্তন করা।

১৬/ যার মুখে একবার কৃষ্ণনাম শুনবে ,, তাঁকেই জানবে বৈষ্ণব।একবার কৃষ্ণনাম করলে সর্বপাপ ক্ষয় হয়।হৃদয়ে নববিধা ভক্তির উদয় হয়।

১৭/ কৃষ্ণ সম্পতি দারু ও জল রুপে প্রকট।সার্বভৌম, তুমি দারুব্রহ্ম জগন্নাথের আরাধনা কর।আর বচস্পতি, তুমি জলব্রহ্ম ভাগীরথীর সেবা কর।

১৮/ নিরন্তর যার মুখে কৃষ্ণনাম ,, তিনিই হলেন বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ।তাঁর চরণ বন্দনা করবে।

১৯/ যারা মায়াবাদী ,, তারা শ্রীকৃষ্ণ অপরাধী।তাদের মুখে কৃষ্ণনাম আসে না।

২০/ কেশাগ্রের শতভাগের যে একভাগ ,, সেই একভাগের শতাংশের মতো সুক্ষ্ম হলো জীবের স্বরুপ।তাই জীব হলো চৈতন্যের স্বরুপের কলাতুল্য।সংখ্যায় তার অন্ত নেই।এই অসংখ্য জীবদের মধ্যে কোন ভাগ্যবান জীব গুরু শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদে ভক্তি লতার বীজ লাভ করে।মালী হয়ে সেই বীজ রোপণ করে।শ্রবণ ,, কীর্ত্তন স্বরুপ জল সেচন করে।এই বীজ মহীরুহ হতে পারে যদি উপশাখায় বাধা না পায়।এই উপশাখা হলো মুক্তিবাঞ্ছা ,, নিষিদ্ধাচার ,, জীব হিংসা প্রভৃতি।এইসব উপশাখা বাড়লে মূল শাখা বাড়তে পারে না।

২১/ শ্রদ্ধা ভক্তি থেকেই আসে প্রেম।অন্যান্য বাঞ্ছা ,, ঞ্জান ,, কর্ম ছেড়ে জীবের শ্রেষ্ঠ পথ হলো শ্রদ্ধাভক্তি সহকারে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনুশীলন।

২২/ সাধন ভক্তি থেকে রতির উদয়।রতি গাঢ় হলে হয় প্রেম।প্রেম বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে স্নেহ ,, মান ,, প্রনয় ,, রাগ, অনুরাগ ,, ভাব ,, মহাভাব ইত্যাদি হয়।

২৩/ জীবের স্বরুপ এই যে নিত্য শ্রীকৃষ্ণ দাস।কিন্তু জীব তা ভুলে যায় বলে মায়ার বন্ধনে সে কষ্ট পায়।

২৪/ শ্রীকৃষ্ণ পরম ঈশ্বর ,, তিনি সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ ,, অনাদির আদি গোবিন্দ।অখন্ড মূলের মূল স্বরুপ।তিনি জ্ঞানযোগ ও ভক্তি এরুপ সাধনের বশে ব্রহ্ম ,, আত্মা ,, ভগবান এই তিন রুপে প্রকাশ হন।

২৫/ অনন্ত শক্তি শ্রীকৃষ্ণের।তাঁর অসংখ্য শক্তির মধ্যে তিনটি প্রধান শক্তি ,, চিৎশক্তি ,, জীবশক্তি ও মায়াশক্তি।

২৬/ সর্ব্বস্বরুপের ধাম হলো পরব্যোম ধাম।তাতে পৃথক পৃথক বৈকুন্ঠ।এক একটি বৈকুন্ঠ চিন্তায় শত ,, সহস্র লক্ষযোজন। সব বৈকুন্ঠেই আবদ্ধ চিন্ময় ও ষড়ঐশ্বর্য্য পুর্ণ।

২৭/ কর্ম ,, যোগ ,, ঞ্জান এসবের ফল অতি তুচ্ছ। শ্রীকৃষ্ণ ভক্তি ছাড়া তাতে আর অন্য কোনো ফল হয় না।কেবল জ্ঞানাদি ভক্তি দ্বারা মুক্তি দিতে পারে না।

২৮/ শ্রীকৃষ্ণ সূর্যসম দিপ্যমান ,, মায়া অন্ধকার।যেখানে শ্রীকৃষ্ণ ,, সেখানে মায়ার কোনো অধিকার নেই।

২৯/ নাম সংকীর্ত্তনই কলি যুগের শ্রেষ্ঠ সাধনা।শরণ নিয়ে যে ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণে আত্মসমর্পণ করে ,, শ্রীকৃষ্ণ সে সময় তাকে আত্মসম জ্ঞান করেন।তারপর ভক্তির কথা।ভক্তি দু'রকম ,, বৈধী ও রাগানুগা ভক্তি।শাস্ত্রের নির্দেশে রাগহীন ব্যক্তি যে ভজনা করে,তাহলো বৈধী ভক্তি। ঈষ্টে গাঢ় তৃষ্ণা রাগের স্বরুপ লক্ষণ।ঈষ্টে আবিষ্টতা তার তটস্হ লক্ষণ।রগময়ী ভক্তির নামই রাগানুগা ভক্তি।যা হলে ভাগ্যবান ব্যক্তিরা ও প্রলুব্ধ হয়।

৩০/ আত্মা শব্দের অর্থ সাতটি।যেমন ব্রহ্ম ,, দেহ ,, মন ,, যত্ন ,, ধৃতি ,, বুদ্ধি ও স্বভাব।এই সাতটি কে যে লাভ করেন সেই হলো আত্মারাম।

৩১/ কলিকালে ভক্তি ছাড়া পথ নেই।ব্রহ্ম শব্দের অর্থ ষড় ঐশ্বর্য্য পূর্ণ ভগবান।তাঁকে নির্বিশেষ বললেই তাঁর পূর্ণতায় হানি হয়।

৩২/ প্রত্যহ যিনি কৃষ্ণ শব্দটি উচ্চারণ করেন তার কোনো দিন কোনো অভাব থাকে না।কেউ তার কোনো প্রকার ক্ষতি করতে পারে না।মন প্রাণ শ্রীকৃষ্ণে অবস্থান করলে ,, শ্রীকৃষ্ণই তাকে সকল বিষয়ে লক্ষ করে রক্ষা করবেন।

৩৩/ মায়ায় আবৃত হয়ে জীব আমি-আমরা বাক্য বলে থাকে।কিন্ত মায়া তাকে আবৃত করে কেন ?? শ্রীকৃষ্ণ ভজন না করলে বা শ্রীকৃষ্ণে ভক্তিমন না থাকলে মায়া তো সুযোগ পেয়ে ঝাপটে ধরবেই।

কৃষ্ণ সূর্য্যসম মায়া হয় অন্ধকার ,,যথা কৃষ্ণ তথা নাহি মায়ার অধিকার !!

🌿🌼 হরে কৃষ্ণ 🌼🌿
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url