দেবকী ও বসুদেবের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত - Krishno kotha

দেবকী ও বসুদেবের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত।।

দেবকী ও বসুদেবের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত - Krishno kotha

কংসের কারাগারে চতুর্ভুজ রুপ ধারী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাতা দেবকীকে বললেন.....

“হে মাতঃ! স্বায়ম্ভুব মনুর সময় আমার পিতা বসুদেব সুতপা নামে একজন প্রজাপতি ছিলেন আর আপনি ছিলেন তাঁর পত্নী। আপনার নাম ছিল পৃশ্মি। সেই সময় ব্রহ্মা প্রজা বৃদ্ধি করার আকাঙক্ষায় আপনাদের সন্তান উৎপাদন করতে অনুরোধ করেন।

তখন আপনারা আপনাদের ইন্দ্রিয় সংযম করে কঠোর তপস্যা করেছিলেন। প্রাণায়াম করে আপনি এবং আপনার পতি জড়া প্রকৃতির সমস্ত নিয়মগুলি সহন করেছিলেন- বর্ষার বর্ষণ, গ্রীষ্মের তাপ, ঝড়-ঝঞ্ঝা সব আপনারা সহ্য করেছিলেন, তপশ্চর্যা পালন করে আপনারা কেবল গাছের ঝরা পাতা আহার করে জীবন ধারণ করেছিলেন,

তারপর আপনারা ইন্দ্রিয়নিগ্রহ করে একাগ্রচিত্তে আমার আরাধনা করে আমার কাছ থেকে কোনও অদ্ভুত বর প্রার্থনা করেছিলেন। আপনারা দেবতাদের গণনা অনুসারে ১২,০০০ বছর ধরে কঠোর তপস্যা করেছিলেন। সেই সময় আপনাদের চিত্ত কেবল আমাতেই সমাহিত ছিল।

আপনারা যখন ভক্তিযোগ অনুষ্ঠান করছিলেন এবং আপনাদের হৃদয়ে সর্বক্ষণ আমারই ধ্যান করছিলেন, তখন আমি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছিলাম। হে নিষ্পাপ মাতঃ! আপনার অন্তঃকরণ নির্মল। সেই সময়েও আমি এই রূপ নিয়েই আপনার কাছে আবির্ভূত হয়েছিলাম আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার জন্য।

আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘আপনি কি কামনা করেন?’ সেই সময়ে আপনি বলেছিলেন, আমি যেন আপনার পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করি। যদিও আপনি তখন মুক্তি প্রার্থনা না করে আপনি কেবল আমাকে আপনার পুত্ররূপে কামনা করেছিলেন।”

পক্ষান্তরে বলা যায় যে, পরমেশ্বর ভগবান এই জড় জগতে আবির্ভূত হওয়ার জন্য পৃশ্নি এবং শতপাকে তাঁর পিতা-মাতারূপে মনোনীত করেছিলেন। ভগবান যখনই একজন মনুষ্যরূপে অবতরণ করেন, তখন তিনি তাঁর কোন ভক্তকে তাঁর পিতা-মাতারূপে গ্রহণ করেন। তাই তিনি পৃশ্মি এবং সুতপাকে তাঁর মাতা এবং পিতারূপে গ্রহণ করেছিলেন।

সেই জন্যই পৃশ্মি এবং সুতপা মুক্তি প্রার্থনা করেননি। ভগবানের চিন্ময় সেবার কাছে মুক্তি অত্যন্ত নগণ্য। ভগবান তৎক্ষণাৎ পৃশ্নি এবং সুতপাকে মুক্তি দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তাঁদের এই জড় জগতেই থাকতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যাতে তাঁরা তাঁর মাতা এবং পিতারূপে তাঁর লীলায় তাঁর সঙ্গলাভ করার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।

ভগবানের কাছ থেকে তাঁর মাতা ও পিতা হওয়ার বর লাভ করে পৃশ্মি এবং সুতপা তাঁদের তপশ্চর্যা সমাপ্ত করে ভগবানকে তাদের পুত্ররূপে লাভ করার জন্য, পতি ও পত্মীরূপে বসবাস করতে লাগলেন।

প্রিয় কৃষ্ণ ভক্ত
আমরা কৃষ্ণ কথা গুলো আমরা সংগ্রহিত করি শুধু মাত্র আপনাদের মাঝে কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি জাগানোর লক্ষে। যাতে করে সবাই নিজের ধর্মের কথা জানতে পারে ও কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি হৃদয়ে জাগ্রত হয়। আমাদের যে কোনো রকম ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হরে কৃষ্ণ......


যথাসময়ে পৃশ্নি গর্ভবতী হলেন এবং একটি পুত্রসন্তান লাভ করলেন। দেবকী এবং বসুদেবকে ভগবান বললেন, “সেই সময় আমার নাম হয়েছিল পৃশ্নিগর্ভ। পরবর্তী যুগে আপনারা অদিতি ও কশ্যপরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং আমি উপেন্দ্র নামে আপনাদের সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলাম। সেই সময় আমি বামনরূপ ধারণ করেছিলাম আর সেই জন্য আমার নাম হয়েছিল বামনদেব।

আমি আপনাদের বর দিয়েছিলাম যে, তিনবার আমি আপনাদের সন্তানরূপে জন্মগ্রণ করব। তাই প্রথমে আমি পৃশ্নি এবং সুতপার সন্তান পৃশ্নিগর্ভরূপে, তারপর অদিতি এবং কশ্যপের পুত্র উপেন্দ্ররূপে এবং এখন আপনাদের কৃষ্ণরূপে আমি এসেছি।

আমি এই চতুর্ভুজ রূপ নিয়ে আবির্ভুত হয়েছি, কেবল আপনাদের প্রত্যয় উৎপাদন করবার জন্য যে, আমি পরমেশ্বর ভগবান, আমার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আবার আপনাদের পুত্ররূপে আবির্ভূত হয়েছি। আমি একটি সাধারণ শিশুর মতো রূপ নিয়ে আবির্ভূত হতে পারতাম,

কিন্তু তা হলে আপনারা বিশ্বাস করতেন না যে, আমি পরমেশ্বর ভগবান আপনাদের পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেছি। হে পিতঃ, হে মাতঃ, আপনারা বহুবার আপনাদের সন্তানরূপে গভীর স্নেহ ও ভালবাসার সঙ্গে লালন-পালন করেছেন, আমি তাই আপনাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এবং আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি যে, এইবার আপনারা চিৎ-জগতে আমার অপ্রাকৃত ধামে ফিরে যাবেন।

কেননা, আপনাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হেয়েছে। আমি জানি যে, আপনারা আমাকে নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত এবং কংসের ভয়ে ভীত। তাই এখন আমাকে গোকুলে নিয়ে চলুন। সেখানে নন্দ এবং যশোদার একটি কন্যা হন্মগ্রহণ করেছে। আমাকে ওখানে রেখে তাকে এখানে নিয়ে আসুন।”

এইভাবে তাঁর পিতা-মাতার সঙ্গে কথা বলে ভগবান নিজেকে একটি ছোট্র শিশুতে পরিণত করলেন। শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা আদিষ্ট হয়ে বসুদেব সুতিকাগার থেকে তাঁর সন্তানটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। সেই সময় গোকুলে নন্দ এবং যশোদার একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করেছিল।

তিনি ছিলেন ভগবানের অন্তরঙ্গা শক্তি যোগমায়া। যোগমায়ার প্রভাবে কংসের প্রাসাদের প্রতিটি বাসিন্দা বিশেষ করে প্রহরীরা মোহাচ্ছন্ন হয়ে গভীর নিদ্রায় মগ্ন হল এবং কারাগারের সব কটি দরজা আপনা থেকেই খুলে গেল, যদিও সেগুলি খিল দেওয়া ছিল এবং লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা ছিল। সেই রাত্রিটি ছিল ঘোর অন্ধকার। কিন্তু যখনই বসুদেব তাঁর শিশুসন্তানটিকে কোলো নিয়ে বাইরে এলেন, তিনি সব কিছু দিনের আলোর মতো দেখতে পেলেন।

চৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে “কৃষ্ণ- সূর্যসম; মায়া হয় অন্ধকার। যাঁহা কৃষ্ণ, তাঁহা নাহি মায়ার অধিকার।।” অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সূর্যের মতো এবং তিনি যেখানে থাকেন সেখানে মায়ার অন্ধকার থাকতে পারে না।

বসুদেব যখন শ্রীকৃষ্ণকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন রাত্রির অন্ধকার বিদুরিত হয়ে গেল। কারাগারে সব ক’টি দ্বার আপনা থেকেই খুলে গেল। আর ঠিক সেই সময় গভীর বজ্রনিনাদের সঙ্গে প্রবল বর্ষণ হতে শুরু করল।

বসুদেব যখন তাঁর শিশুসন্তান শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে সেই বৃষ্টির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ভগবান শেষ সর্পরূপ ধারণ করে, সেই বর্ষণ থেকে বসুদেবকে রক্ষা করার জন্য বসুদেবের মাথার উপরে তাঁর ফণা বিস্তার করলেন। বসুদেব যমুনার তীরে এসে দেখলেন যে, যমুনার জল প্রচন্ড গর্জন করতে করতে ছুটে চলেছে, তার বিশাল তরঙ্গগুলি ফেনিলোচ্ছল হয়ে উঠেছে।

কিন্তু এই ভয়ঙ্কর রূপ সত্ত্বেও যমুনা্ বসুদেবকে যাওয়ার পথ করে দিলেন, ঠিক যেমন ভারত মহাসাগর রামচন্দ্রের সেতুবন্ধনের সময় তাঁর জন্য পথ করে দিয়েছিলেন। এইভাবে বসুদেব যমুনা পার হয়ে অপর পাড়ে গোকুলে নন্দ মহারাজের গৃহে উপস্থিত হলেন।

সেখানে তিনি দেখলেন যে, সমস্ত গোপ-গোপীরা গভীর নিদ্রায় মগ্ন। সেই সুযোগে তিনি নিঃশব্দে যশোদা মায়ের গৃহে প্রবেশ করে তাঁর পুত্রসন্তানটিকে সেখানে রেখে যশোদার সদ্যোজাত কন্যাকে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে এলেন এবং নিঃশব্দে দেবকীর কোলে কন্যাটিকে রাখলেন। তিনি নিজেকে আবার শৃঙ্খলাবদ্ধ করলেন যাতে কংস বুঝতে না পারে যে, ইতিমধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে।

মা যশোদার জ্ঞান ছিল যে, তাঁর একটি সন্তান হয়েছে, কিন্তু প্রসব বেদনায় অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে তিনি গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন। তাঁর যখন ঘুম ভাঙল তখন তিনি স্থির করতে পারলেন না যে, তিনি একটি পুত্র না কন্যা প্রসব করেছিলেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url