মা সন্তোষী ব্রতকথা - Krishno Kotha

মা সন্তোষী ব্রতকথা - Krishno Kotha

মা সন্তোষী ব্রতকথা

ॐ শ্রী সন্তোষী মহামায়ে গজানন্দন দায়িনী
শুক্রবারঃ প্রিয়ে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে।।
 
পৌরাণিক মতে, গণেশের দুই পুত্র শুভ আর লাভ- এর মনোবাসনা পূর্ণ করতে কন্যা রূপে দেবী সন্তোষীর সৃষ্টি করেছিলেন গণেশ। সেই দিন ছিল রাখী পূর্ণিমা, শুক্রবার। শুভ আর লাভের ইচ্ছা ছিল তাঁরা বোনের হাতে রাখী বাঁধবেন। তাই দাদাদের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করায় তাঁর নাম হল সন্তোষী।

মা সন্তোষী সন্তোষের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি ভক্তের সকল মনোষ্কামনা পূর্ণ করেন। তিনি রক্তবস্ত্র পরিহিতা। মায়ের ত্রিনয়ন হল চন্দ্র সূর্য এবং অগ্নি। তিনি রত্ন সিংহাসনে বিরাজ করেন, তিনি সকল প্রকার ঐশ্বর্যের অধিশ্বরী। চর্তুভূজা মায়ের এক হাতে থাকে তীক্ষ্ণ ধারালো তরবারি, যা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পরিচয়। অপর হাতে ত্রিশূল। ত্রিশূলের তিনটি ফলা ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের প্রতীক। সত্ত্ব, রজ, তম এই ত্রিগুণের সমাহার হল ত্রিশূল। বাকি দুই হাতে বরাভয় ও সংহার। 

মায়ের বাহন বৃষ। গো জাতি সত্ত্ব গুনী সাত্ত্বিক গুণের আধার। বৃষর মধ্যে দুটি গুন দেখা যায়, যখন সে শান্ত তখন সে ধীরে ধীরে চলে। কিন্তু রেগে গেলেই সে ঠিক উল্টো। বিষকে সবসময় মায়ের পদতলে শান্তভাবে দেখা যায়। মানুষের মধ্যেও ক্রোধ ও শান্ত দুই ভাব বিরাজ করে। ক্রোধে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য; আবার শান্ত ভাবে প্রসন্ন। আমাদের সবসময় ঈশ্বরের কাছে প্রসন্নচিত্তে যাওয়া উচিৎ, ক্রোধ নিয়ে ঈশ্বরের কাছে গেলে কিছুই প্রাপ্তি হয় না। বৃষ আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়।

প্রিয় কৃষ্ণ ভক্ত আমরা কৃষ্ণ কথা গুলো আমরা সংগ্রহিত করি শুধু মাত্র আপনাদের মাঝে কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি জাগানোর লক্ষে। যাতে করে সবাই নিজের ধর্মের কথা জানতে পারে ও কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি হৃদয়ে জাগ্রত হয়। আমাদের যে কোনো রকম ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হরে কৃষ্ণ......

মা সন্তোষীর একটি ব্রতকথা শোনা যায়। সেটি হল বিজু ও মালিনীর উপাখ্যান। মালিনীর ঘটনা একরকম 
-বিজু কোন কারনে কাজ করতে শহরে চলে যায়। সেখানে গিয়ে এক নারীর প্রেমে পড়ে বাড়ীর কথা স্ত্রীর কথা ভুলে যায়। অপরদিকে শ্বশুর বাড়ীতে মালিনীর ওপর অত্যাচার বৃদ্ধি হলে, মালিনী ভাবে সে আত্মহত্যা করে মুক্তি পাবে।

এই ভেবে মালিনী পাহাড়ের ওপর থেকে খাদে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হয়। ঠিক সেই সময় দেবর্ষি নারদ মুনি প্রকট হয়ে বললেন- ‘আত্মহত্যা মহাপাপ। তুমি গৃহে ফিরে ষোলো শুক্রবার সন্তোষী মায়ের ব্রত করো।’ নারদ মুনি মালিনীকে ব্রতের সমস্ত নিয়ম শিখিয়ে দেয়। গৃহে ফিরে মালিনী সন্তোষী মায়ের ১৬ শুক্রবার ব্রত পালন করতে থাকে। অল্প কালের মধ্যেই মা সন্তোষী ভক্তের প্রতি সন্তুষ্ট হন। বিজুর পূর্ব স্মৃতি ফিরে আসে। সে অনেক জিনিস পত্র নিয়ে বাড়ী ফিরে আসে। এরপর মালিনীকে নিয়ে সুখে থাকতে লাগে।
 
শ্রীশ্রীসন্তোষী মাতার ব্রতকথা পালনের নিয়মঃ --
শুক্রবার সন্তোষী মায়ের আবির্ভাবের দিন বলে এইদিন এই পূজা পালিত হয়। কোনও তিথি নক্ষত্রের বিধিনিষেধ নেই। যেকোনও বয়সী নারীপুরুষ এই ব্রত পালন করতে পারেন। প্রতি শুক্রবারে উপবাস করে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র, ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে সন্তোষী মাতার ব্রত পাঠ করতে হবে। ব্রতপালনের একটাই মূল শর্ত হল‚ যিনি পালন করবেন‚ সেই ব্রতী এদিন টকজাতীয় কিচ্ছু খেতে পারবেন না। প্রসাদেও টক খাবার যেন কিছু না থাকে।
 
ব্রতের ফল --
ভক্তিভরে যে নারী এই ব্রত উদ্‍যাপন করবে - তার সব কামনা সিদ্ধ হবে। গৃহে অর্থাভাব থাকবে না।
 
পূজার উপকরণ --
সন্তোষী মায়ের মূর্তি বা ছবি, ব্রতকথার বই, ঘট, পানপাতা, ফুল, কর্পূর, ধূপকাঠি, প্রদীপ, ঘি বা তেলে পূর্ণ হলুদ, সিঁদুর, ঘটে রাখার জন্য ফল(নারকেল), হলুদ মেশানো আতপ চাল, ছোলা, গুড় আর কলা হল প্রসাদ।

পূজা পদ্ধতি --
ঘরের এক কোণ পরিষ্কার করে কাঠের আসন পাতুন। প্রতিষ্ঠা করুন দেবীর ছবি। নইলে রোজ যেখানে পুজো করেন, সেখানেও করা যায়। শুক্রবার সকালে স্নান সেরে পরিষ্কার বসনে দেবীর সামনে ঘট প্রতিষ্ঠা করুন। ঘটে গঙ্গাজল বা গঙ্গাজল না পেলে এমনি পরিষ্কার জল দিয়ে পূর্ণ করুন। তিথি নক্ষত্র দোষ নেই এই পূজাতে। ঘট স্থাপন করবেন বট, কাঁঠাল, পাকুড় পল্লব দ্বারা। আম্র পল্লব দেবেন না। পূজোতে সব পুষ্পই চলবে। বিল্বপত্র আবশ্যক। ঘটে পুত্তলিকা অঙ্কন করবেন সিঁদুরে ঘি মিশিয়ে। ঘিয়ের প্রদীপ পূজাতে ব্যবহার করবেন।

ঘটে গোটা ফল হিসাবে নারকেল দেবেন। ঘটের উপর ফল রাখুন। প্রসাদ হিসেবে দিন ভেজানো ছোলা, গুড় এবং কলা। এরপর আচমন , বিষ্ণু স্মরণ, আসন শুদ্ধি, সূর্য অর্ঘ্য, সঙ্কল্প করে গুরুদেব ও পঞ্চ দেবতার পূজা করবেন। এরপর প্রথমে সন্তোষী মায়ের বাবা গণেশ এবং দুই মা ঋদ্ধি ও সিদ্ধির পূজা করবেন। তারপর সন্তোষী মায়ের পূজা করবেন। ধ্যান মন্ত্র, প্রনাম মন্ত্র বলবেন। মনের প্রার্থনা মায়ের চরণে জানাবেন। এরপর মা সন্তোষীর ব্রতকথা পাঠ করবেন।

পাঠ শেষে শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিন। প্রণাম করে বলুন‚ ‘জয় সন্তোষী মা !’ এরপর আরতি করুন। শান্তির জল ছিটিয়ে দিন বাড়ির সর্বত্র। পূজা শেষে মায়ের প্রসাদ গোমাতা কে অল্প দিয়ে নিজে গ্রহণ করবেন। এই ভাবে ১৬ শুক্রবার ব্রত করবেন। শুক্রবার যিনি ব্রত করবেন সারা দিন উপবাস থাকবেন। দুধ, ছোলা, ঘিতে আলু ভেজে, মিষ্ট ফল, জল গ্রহণ করবেন। অসমর্থ হলে একবেলা উপবাস রেখে অপর বেলা আলু সেদ্ধ, ঘি, আতপ অন্ন গ্রহণ করতে পারেন। ১৬ শুক্রবার ব্রত হলে উদযাপন করবেন।

প্রিয় কৃষ্ণ ভক্ত আমরা কৃষ্ণ কথা গুলো আমরা সংগ্রহিত করি শুধু মাত্র আপনাদের মাঝে কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি জাগানোর লক্ষে। যাতে করে সবাই নিজের ধর্মের কথা জানতে পারে ও কৃষ্ণ প্রেম ভক্তি হৃদয়ে জাগ্রত হয়। আমাদের যে কোনো রকম ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হরে কৃষ্ণ......


সাধারণত উদযাপন ছাড়া এই পূজোতে পুরোহিত লাগে না। সবাই করতে পারবেন। খেয়াল রাখবেন এই দিন গৃহে কোন সদস্য বা যিনি ব্রত পূজা করবেন - ভুলেও যেন টক পদার্থ না গ্রহণ করেন। উদযাপনের দিন ৭ /৮ জন বালককে ভোজন করাবেন। খেয়াল রাখবেন ওই ৭/৮ বালক যেন সেই দিন টক বস্তু না খায়। ভোজনের পরে তাদের বস্ত্র‚ ফল এবং দক্ষিণা দিতে পারেন।

উদযাপনের দিন ১৬ টি নিমকী চিনির রসে ডুবিয়ে মায়ের কাছে উৎসর্গ করবেন। ছানা থেকে তৈরী কোন মিষ্টি মাকে দেবেন না। উদযাপনের দিন মায়ের কাছে একটি নারকেল ফাটিয়ে নারকেলের জল মায়ের চরণে দেবেন। নারকেল মায়ের সামনে ফাটাবেন এক আঘাতে। ফাটানোর সময় মায়ের নামে জয়ধ্বনি দেবেন। এই ভাবে মা সন্তোষীর ব্রত করুন। দেখবেন মায়ের কৃপায় আপনার জীবন সুখে শান্তিতে ভরে যাবে। মায়ের কৃপায় সব অমঙ্গল, দুঃখ, অশান্তি বিনষ্ট হবে।

জয় মা সন্তোষী
---
(সংগৃহীত)
-------------------
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
========================
Next Post Previous Post